ডেস্ক রিপোর্ট: সাফে ইতিহাস গড়ে বীরবেশে দেশে ফেরা মেয়েদের অর্জনকে নারীদের ঘিরে থাকা কাচের দেয়াল ভাঙার অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দেশের কীর্তিমান নারীরা ।
নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় করে নেপাল থেকে দেশে ফেরা সাবিনা খাতুন আর তার দল যখন ছাদ খোলা বাসে ট্রফি হাতে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছার স্রোতে ভাসতে ভাসতে বাফুফের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনও ফেইসবুকে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছিলেন খেলার মাঠের পোশাক নিয়ে, মেয়েদের এসব খেলায় ধর্মনাশের কষ্টের কথাও কারও কারও পোস্টে আসছিল।
এমন অনেক তীর্যক মন্তব্য, অশালীন বাক্যবাণ আর সামাজিক পুলিশের বাধা পেরিয়েই দেশকে শিরোপার গৌরব এনে দিতে পেরেছেন কলসিন্দুরের মারিয়া, শিউলি আর রাঙামাটির ঋতুপর্ণারা। কাঠমান্ডুতে ফাইনালের আগে ফেইসবুকে সে কথাই লিখেছিলেন সানজিদা আখতার।
তিনি বলেছিলেন, “যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই।
“আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
সকল কাঁটা ধন্য করে, নেপালে ইতিহাস গড়েই বুধবার বীরবেশে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বিমানবন্দর থেকে তাদের আনন্দযাত্রায় মাথার ওপর ছিল উন্মুক্ত আকাশ।
নারী ফুটবলারদের এই অর্জনকে সমাজের ট্যাবু আর নারীদের ঘিরে থাকা কাচের দেয়াল ভাঙার অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখছেন অধিকার কর্মী মালেকা বানু।
তার ভাষায়, নারী ফুলবল দলের এই শিরোপা জয় শুধু খেলার মাঠের সাফল্য নয়, সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ারই বড় উদযাপন।
“মেয়েরা যত এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের পিছনে টেনে ধরার একটা প্রবণত রয়েছে। সেই রকম প্রতিকূল পরিবেশে, তারা যে পর্যায়ে গেছে, সেটা শুধু নিজেদের জন্য নয়। তারা দেশের জন্য বড় অর্জন বয়ে এনেছে। তারা একটা খোলা বাসে আসতে চেয়েছে। মানে তারা বদ্ধ ঘরে থাকতে চায় না, পৃথিবীটা তাদের জন্য খোলা হোক- সেটা তারা চায়।
সমাজের নানা অঙ্গনের কীর্তিমান নারীরা বলছেন, মেয়েরা যে প্রতিকূল পরিবেশেও এগিয়ে যেতে পারে, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সে উদাহরণই তৈরি করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “যে গ্রামগুলো থেকে নারী ফুটবলাররা এসেছে, সেসব জায়গায় অনেক কুসংস্কার রয়েছে। সমাজ কাঠামো অনেক দুর্বল। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, তারা ফতোয়া দেয়।
“এইসব এলাকার মানুষকে আরও সোচ্চার হতে হবে। তারা দেশকে যে শিরোপা এনে দিয়েছে, তাতে বিশ্বে বাংলাদেশ আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াল।”
নারী ফুটবলারদের কীর্তির প্রশংসার মধ্যেই অনেকে যে তাদের পোশাক নিয়ে সমালোচনা করছে, সেটা ‘নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি পুরনো এবং বড় অস্ত্র’ বলেই মন্তব্য এ অধ্যাপকের।
“স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা এ ধরনের কথা কেন বলব? তারা তো অশালীন পোশাক পরে খেলেনি, খেলার যে পোশাক সেটাই পরেছে। পোশাকের কথা বলে তাদের খেলা থেকে বিরত রাখার জায়গায় বাংলাদেশ এখন আর নেই।”
নারীদের নিয়ে সমালোচনা না করে গঠনমূলক কাজ করে তাদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী হতে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ বিঃদ্রঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষামান।