বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারনে দ্বিতীয় দিনের মত বেনাপোলেও বন্ধ রয়েছে গনপরিবহন। পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে ছোট ছোট যান চলতে দেখা যায়। গণপরিবহন না চলার সুযোগে জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ পড়েছেন বিপদে। নিরুপায় হয়ে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অপরদিকে পরিবহন বন্ধ থাকায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। সকাল সাড়ে ৮ টার সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ডেস্কগুলো ফাকা দেখা গেছে। এর কারনে সরকারের রাজস্ব আয় ও কম হবে ।
অঘোষিত গণপরিবহন ‘ধর্মঘটে’ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ভারত ফেরত পাসপোর্টযাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্য পৌঁছতে না পেরে ভিড় করছেন পরিবহন কাউন্টারসহ হোটেলে। আবার যাদের কাছাকাছি আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি রয়েছে তারা সেখানেও যাচ্ছেন। সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। অনেকে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা না থাকায় পারছেন না আবাসিক হোটেলে থাকতে।
বেনাপোল থেকে কোনো পরিবহন ও বেনাপোল-যশোর সড়কে কোন বাস চলছে না। হুট করে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় মানুষ সহ ভারত ফেরত যাত্রীরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। যে জায়গার ভাড়া সাধারণ সময়ে ১৫ টাকা ছিল, সেই জায়গায় এ সুযোগে তারা ২৫ থেকে শুরু করে ৩০ টাকা চাচ্ছেন।
তবে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল করলেও তার সংখ্যা কম।
এদিকে, একটানা বন্ধ থাকলে বড় অসুবিধা হবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। বেনাপোল বন্দরের খালাসকৃত পণ্য গন্তব্যে পৌঁছতে না পারলে দেশের কলকারখানা পড়বে বিপাকে। কারণ ভারত থেকে দেশের শিল্প কলকারখানার সিংহভাগ পণ্য আসে এ পথে। গতকাল শুক্রবার বন্ধ থাকার কারণে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। আজ শনিবার গন পরিবহন বন্ধ থাকার কারনে আমদানিকৃত কাঁচা পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রামহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে পারছে না।
সাধারণ যাত্রীদের দাবি, দ্রুত যাতে পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
বেনাপোল বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী সোহেল রানা জানান, তিনি যশোর যাবেন ডাক্তার দেখাতে। সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন, পরিবহন বন্ধ রয়েছে। কোনো বাস চলছে না। বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইকে ভাড়া দাবি করছে দেড়শ টাকা। কোনো উপায় না থাকায় ওই টাকা দিয়েই তাকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ইজিবাইকচালক বাবুল হোসেনকে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে তাদের আয় একটু বেশি হচ্ছে। তবে খরচও বাড়ছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।
জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে গতকাল ৪ নভেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। তারা জানান, জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো ও বাস ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত এমনটা চলবে।
ভারত থেকে আসা ঢাকার পাসপোর্টযাত্রী আব্দুল সাত্তার বলেন, আমি চিকিৎসা শেষে বেনাপোল এসে পড়েছি চরম দুর্ভোগে। আমি এবং আমার সাথে থাকা আমার এক ভাই দুজন মিলে চেন্নাই থেকে ফিরে পরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে পারছি না। এদিকে দেশের বাইরে প্রায় ১৫ দিন থাকায় টাকা পয়সাও ফুরিয়ে গেছে। এমন চললে আমাদের চরম সমস্যা হবে। বগুড়ার যাত্রী ডলি রানী বলেন, আমি একটি পরিবহন কাউন্টারে বসে আছি। যদি গাড়ি না ছাড়ে তবে কিভাবে আমি বাড়ি যাব ভেবে পাচ্ছি না। ভারতে চিকিৎসা শেষে আজ প্রায় এক মাস পর দেশে ফিরে দেখি এ অবস্থা।
বেনাপোল মামুন এক্সপ্রেসের ম্যানেজার , আকস্মিকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ভাড়া সমন্বয় অথবা তেলের মূল্য কম না হওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ থাকবে। আমাদের দাবি, তেলের মূল্য যখন বাড়ছে তখন ভাড়াও বাড়বে। নতুবা তেলের মূল্য কমাতে হবে। সরকার এই সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত দেশের সকল জেলায় পরিবহন বন্ধ থাকবে।
শ্রমিক নেতারা বলেছেন, করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের আয় ও জীবন যাপনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনার প্রকোপ কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। কারণ, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ায় পরিবহন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বাড়বে সব ধরনের পণ্যের মূল্যও।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লাখে ১৫ টাকা বৃদ্ধি একপ্রকার জুলুম। শ্রমিক ফেডারেশনের সারাদেশের দুইশ শাখা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিজেলের দাম না কমানো ও বাস ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মাদ রাজু বলেন আজ সকাল থেকে ভারতগামী যাত্রীর চাপ কম। দুরপাল্লা সহ সব ধরনের পরিবহন বন্ধ াকার কারনে হয়ত এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে ভারত থেকে যাত্রী আসা স্বাভাবিক রয়েছে।
বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, পরিবহন বন্ধ াকার কারনে ভারতগামী যাত্রী কম হলেও ভারত থেকে ফেরত আসা যাত্রী স্বাভাবিক রয়েছে।
স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ বিঃদ্রঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষামান।