নূরজাহান নীরা
আমরা ডিজিটাল এবং সমৃদ্ধ একটি দেশের স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন লালন করি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু তার একার পে তা সম্ভব নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। একদিকে যেমন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে পথ দুর্ঘটনা। সড়ক, নৌ ও রেল সব পথেই আমরা অনিরাপত্তায় ভুগছি আমরা। রেল ও নৌ-পথকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হলেও বর্তমানে সে পথে দুর্ঘটনাও কম নয়। প্রায়ই দেখা যায় রেল দুর্ঘটনা অথবা রেল ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি পাটুরয়া ও আরিচা ঘাটে ফেরি ডুবে যেতে, যা বাংলাদেশে এই প্রথম। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে প্রায় ১০ বছর আগে ওই ফেরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও একটি ১০ বছর কি ভাবে চলাচল করে সেখানে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও ফেরি ডুবিতে প্রাণ হানি তেমন ঘটেনি। তবে কয়েকটি ট্রাক ও মোটরসাইকেল তিগ্রস্থ হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে বরগুনা গামি অভিযান লঞ্চটি ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে আগুন লেগে যায়। তাতে প্রাণ হানি ঘটে প্রায় ৪০ জনের মত এবং আহত হয় প্রায় দুই শতাধিক। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যেমে জানা যায় লঞ্চটি ছাড়ার সময় ফোর গরম ছিল। যাত্রীরা অভিযোগ করলে লঞ্চ স্টাফরা কার্পেট পেতে দেয় মেঝেতে। এখানেই বোঝা যায় হঠাৎ করে আগুন লাগেনি। অনেক সময় তাদের হাতে ছিল ইঞ্জিনের ত্র“টি ঠিক করার মত; কিন্তু তা না করে লঞ্চটি তারা ছেড়ে দেয়। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন লঞ্চ ডুবির ঘটনা দেখেছি ও শুনেছি।
এর দুদিন পরেই ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নারায়নগঞ্জ ১ নং রেল গেটে ট্রেন ও আনন্দ বাসের সংঘর্ষে নিহত হয় ৫ জন। আহত হয় অগনিত মানুষ। জানা যায় কোন সিগনাল ছাড়াই ট্রেনটি চলে আসে। এভাবে প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকেই বুঝা যায় সংশ্লিষ্ট লোকজনের অবহেলা ও দায়িত্ব হীনতার কারনেই এই সব দুর্ঘটনা ঘটছে। শত শত প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি হয়; নিহতের পরিবারকে দেওয়া হয় কিছু টাকা। কত সহজে একটি প্রাণকে টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়া হয়। অথচ আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা করলে বেঁচে যেতে পারে এসব তরতাজা জীবনগুলো। আমি গত ২৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে যশোর এসেছি। মাওয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি লঞ্চ পার হওয়ার সময় দেখলাম লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের সাথেই গ্যাস লিলিন্ডারে হচ্ছে রান্না। লঞ্চ যাত্রীরা সেখানে খাওয়া দাওয়া করছে। একটি লঞ্চের ইঞ্জিনের সাথে এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালানো কতটুকু নিরাপদ আমরা কি তা ভেবে দেখেছি ? এ ভাবেই চলছে বছরের পর বছর। দেখার কেউ নেই ! হোটেলে যে ছেলেটি রান্না করছে তাকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে লঞ্চের মধ্যে হোটেল করার অনুমতি কে দেয়? মালিক না অন্য কোন কর্তৃপ ? ছেলেটি বলল আমি শুধু এখানে কাজ করি, এর বেশী কিছু বলতে পারি না। হোটেলের মালিককে খোজ করে পাওয়া যায়নি। গেলাম লঞ্চ চালকের কাছে । লঞ্চ চালক আবুল কালাম উনিও সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারলেন না। কার কাছে কি ভাবে অনুমতি নিয়ে হোটেল চালাতে হয়। তবে তিনি এতটুকু বললেন গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে কেরোসিনের চুলা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন উপর থেকে । কয়েক দিনের মধ্যেই সেটা করা হবে। কথা হচ্ছিল হিরোণ-১ নামে একটি লঞ্চের চালকের সাথে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পিছনে এমন হাজারও অনিয়ম চলতে থাকে বছরের পর বছর। আর দুর্ঘটনার পর হয় তদন্ত নামে প্রহসন। লঞ্চের এই গ্যাস সিলিন্ডার থেকে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই এখনি নৌ কর্তৃপরে উচিৎ এসব সিলিন্ডার সরিয়ে ফেলা। যেন অথৈ জলের মাঝে থেকেও ঝলসে না যায় আর কোন সজিব দেহ।
লঞ্চ ট্রেন বাস প্লেন প্রতিটি পথই করতে হবে নিরাপদ ও ঝুকিহীন। লঞ্চ গুলোতে পর্যাপ্ত লাাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা করা দরকার। দরকার প্রয়োজনীয় নিরাপদ সকল ব্যবস্থাপণার। কর্তৃপরে পাশাপাশি জনগনকেও সচেতন হতে হবে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যপারে। মরার পর জীবনের বিনিময়ে টাকা চাই না চাই জীবন। চাই বেচে থাকতে।
স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ বিঃদ্রঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষামান।