বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
যশোর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের জন্য স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এ্ই দেশের শতকরা ৮০ জন কৃষককে স্বচ্ছল করে তুলতে হবে তবে হবে আমাদের স্বাধীনতার স্বার্থকতা। তার নতুন নতুন স্বপ্ন যখন এক এক করে এদেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য নতুন দিগন্তের সুচনা শুরু হলো তখন আমরা দেখলাম ১৫ আগষ্ট। বিশে^র কাছে যে জাতি ছিল বীরের জাতি যে জাতি ছিল প্রশংসার জাতি সেই জাতি এদেশের কিছু বিপথগামি সেনা সদস্যদের জন্য মুহুর্তের মধ্যে বিশ^ নেতাদের কাছে বেঈমানের জাতিতে পরিনত হলো। আমাদের এই স্বাধীন সার্বোভৌম রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশে^র সমাবেশে যোগ দেওয়ার মনস্তাব করেছিলেন তখন অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছিল।এরপর তিনি যোগ দিলেন এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন। সেই সময় কায়রোতে ভুয়াশী প্রসংশা করে সংবাদ প্রকাশ হলো একটি বন্দুকের গুলি ব্যবহার না করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুসলিম বিশ^কে জয় করলেন। তিনি রবি ঠাকুরের একটি চিঠির উদাহরন টেনে বলেন, আমার কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ^াস নেই। আমার বিশ^াস স্ইে মানুষগুলোর উপর যে মানুষ এর মধ্যে রয়েছে মহানুভবতা, সঠিক কর্ম, যথার্থ চিন্তা আমি সেই মানুষগুলোকে নেতা বলি। আমরা যদি মনে করি জাতির জনক নেতা কি না। ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান ভাগ হলো তখন কোলকাতা বেকার হোষ্টেলে বন্ধুদের নিয়ে একটি ছোট্র সমাবেশে তিনি বলেছিলেন আজ পাকিস্তান ও পুর্ব পাকিস্তান ভাগ হয়েছে এই পাকিস্তান কখনো কোন দিন বাঙালীর স্বার্থ রক্ষা করবে না। তাই আমাদের স্বাধীনতা প্রয়োজন। তার সেই সুদুর প্রসারি চিন্তা চেতনাকে আমরা নেতা না বলে থাকতে পারি। ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন সবুজ শ্যামল এই বাংলায়। তাঁর জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান ছিলেন। পরিবারের সবাই ‘খোকা’ নামে ডাকতেন। কেউ কি ভেবেছিল শেখ পরিবারের আদরের ছোট্ট খোকা একদিন বিশ্ব নন্দিত নেতা হবেন কিংবা স্বাধীনতায় নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা? গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের জন্য জনগণ তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-কারাবন্দির কারণে ইতিহাসে তাঁকে জাতির পিতার অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়। ’কথাগুলো বললেন জাতিয় শোক দিবস বঙ্গবন্ধুর ৪৬ তম সাহাদৎ বার্ষিকীতে নাভারন সাতক্ষীরা মোড়ে প্রধান অতিথি হিসাবে মেয়র লিটন।
শুক্রবার বেলা ৪ টার সময় শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি মেয়র লিটন বলেন,১৯৪৭ সালে তিনি কোলকাতার মিল্লাত পত্রিকায় গিয়ে বলেছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা। ১৯৬১ সালে তিনি বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের গোপন বৈধকে বলেছিলেন আপনাদের সব কথা মানব তবে স্বাধীনতার বিকল্প কিছুই নেই। স্বাধীনতার জন্য কারো সাথে আপোষ নাই। ছয় দফ দাবির বিষয় নিয়ে ন্যাপ মোজাফার বলেছিলেন আপনি কি বোঝাতে চাইছেন আমার দাবিতো একটি সেটা হলো স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না কিংবা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। শিশুকাল থেকেই কারো সাথে অন্যায় করা হচ্ছে বা কারো অধিকার হরণ করা হচ্ছে দেখলে প্রতিবাদীরূপে তিনি সেখানে আবির্ভূত হতেন। অসহায় মানুষ দেখলে তিনি ব্যাকুল হয়ে যেতেন। তাইতো তিনি বাংলার জনগণের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। তাই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এটি কেবল কথার কথা নয়, দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত মানুষের উক্তি-লেখা পাঠেও সে বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পড়ে। সেই কারণেই হয়তো আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘একজন ব্যক্তির শারীরিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক মিশনকে হত্যা করা যায় না। কারণ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটতে পারে; কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই।’ আজকে সবার কাছে এটাই স্পষ্ট- বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা লাল-সবুজের একটি পতাকা পেতাম না; নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম না। জাতির জনকের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
তিনি আরো বলেন জাতির জনকের কন্যা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে হাজার হাজার মাইল হেটেছেন এই অবহেলিত জনগোষ্টিকে তার পিতার দেখানো স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তাকে পাকিস্তানী ও স্বাধীনতা বিপথগামিরা হত্যার জন্য ব্যার্থ চেষ্টা করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল জাতির জনককে হত্যা করতে পারলে চিরদিন এই দেশকে লুটে পুটে খাওয়া যাবে। জাতির জনকের প্রকৃত সৈনিকেরা এখনো এদেশে আছে। তারা তার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তার কন্যাকে সহযোগিতা করে চলেছে। আর যারা তার স্বন্নকে নস্যাৎ করতে চায় তারাও জাতির জনকের সৈনিকদের অপমান অপদস্ত এবং তাদের সভা সমাবেশ এর মঞ্চ ভাংগতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন আর বাদরামি করবেন না। আমরা যেমন সভা সমাবেশ জাতির জনকের শোক পালন করছি সেই রকম করে দেখান। আজ জনশুন্য হয়ে ব্যর্থ অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এর সঠিক জবাব পাবেন।
তিনি আরো বলেন,১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও পূর্ব বাংলার বাঙালির উপর নেমে আসে কঠিন অন্ধকার । ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জিন্নাহর ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তান নামের একটি অসম রাষ্ট্রর জন্ম হয়! এর মধ্য দিয়ে শুরু থেকে বাঙালির জীবনে আবারও নেমে আসে শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন। ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীন হলেও এই ভূখণ্ডের বাঙালি আবার পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে থেমে থাকেনি বাঙালি জাতি। ঔপনিবেশিক পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতি শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে। পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে ওঠে।একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এবং তার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ! তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেন দেহ ও আত্মার মত এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আমাদের কাছে!
মেয়র লিটন বলেন,রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। আর বাঙালির এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে এ স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ধারাবাহিক আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর করে নিয়ে গিয়ে, শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
তিনি আরো বলেন,সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন জাতির জনক। সেই ভাষনে তিনি নিজেদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে আমরা একটি সুখী সুন্দর সোনার বাংলা অনেক আগেই অর্জন করতে পারতাম। বিজয় অর্জনের পর সরকার গঠন করে তিনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে যেভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটাই তার প্রমাণ বহন করে। স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি এবং তাদের দোসররা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে সেই পথ রুদ্ধ করে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধ্বংস করা এবং এই দেশকে বিশ্ব দরবারে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তোলা। অথচ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববাসীকে অবাক করে। সেই বিরোধী চক্র নিজেরাই আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে গেছে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আহসান উল্লাহ মাষ্টার, শার্শা উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ফজলূল হক বকুল,সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক,প্রচার সম্পাদক ইলিয়াছ আযম, দপ্তর সম্পাদক আজিবর রহমান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ কোরবান আলী, ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক ্আলতাফ হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান, বনও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদ শেখ সরোয়্রা, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কবির উদ্দিন তোতা, কোষাধ্যাক্ষ খোদাবক্স, সাবেক যুবলীগ নেতা রুহুল কুদ্দুস ভাইয়া, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সেলিম রেজা বিপুল, আওয়ামীলীগ নেতা আলীম রেজা বাপ্পী, মিজানুর রহমান,যুবলীগ নেতা সাহেব আলী পুটখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল গফফার সরদার, বেনাপোল ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা সাহেব আলী, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আকুল হোসাইন, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সজল, দপ্তর সম্পাদক আরিফুর রহমান প্রমুখ।
স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ বিঃদ্রঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষামান।